ভরদুপুরে কবিতা নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ।। বাংলা কবিতা।। শ্রেণি- ষষ্ঠ।।Primary Education।।vordupur kobita
ভরদুপুর
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
ওই যে অশথ গাছটি, ও তো
পথিকজনের ছাতা,
তলায় ঘাসের গালচেখানি
আদর করে পাতা ।
চরছে দূরে গোরুবাছুর,
গাছের তলায় শুয়ে,
দেখছে রাখাল মেঘগুলো যায়
আকাশটাকে ছুঁয়ে।
খোলের মধ্যে বোঝাই করে
শুকনো খড়ের আঁটি
নদীর ধারে বাঁধা কাদের
ওই বড়ো নৌকাটি।
কেউ কোথা নেই, বাতাস ওড়ায়
মিহিন সাদা ধুলো,
ভরদুপুরে যে যার ঘরে
ঘুমোচ্ছে লোকগুলো।
শুধুই কী আর মানুষ ঘুমোয়,
যে জানে, সে-ই জানে
আঁচল পেতে বিশ্বভুবন
ঘুমোচ্ছে এইখানে।
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী (১৯২৪-২০১৮) : জন্মস্থান বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলা। সত্যযুগ পত্রিকার সাংবাদিকরূপে কর্মজীবন শুরু করেন, পরবর্তীকালে আনন্দবাজার পত্রিকা -র সঙ্গে যুক্ত হন। বহুদিন তিনি আনন্দমেলাসম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলা কবিতার জগতে কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী অত্যন্ত জনপ্রিয় নাম । তাঁর কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে রয়েছে – নীল নির্জন, অন্ধকার বারান্দা, কলকাতার যীশু প্রভৃতি। উলঙ্গ রাজা কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেছেন।
• সারসংক্ষেপ : ‘ভরদুপুরে' কবিতায় পল্লিবাংলার এক অনিন্দ্যসুন্দর নিসর্গচিত্রের পরিচয় পাই আমরা। একটি অশ্বত্থ গাছ দুপুরবেলা তার পাতার মাধ্যমে শান্ত শীতল ছায়ার সৃষ্টি করেছে। তার নীচে সবুজ কোমল ঘাস যেন গালিচা পেতে রেখেছে। ক্লান্ত রাখাল মধ্যাহ্নের রোদের হাত থেকে অব্যাহতি লাভ করার জন্য গাছের তলায় শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে। তার গোরুবাছুরের দল মাঠে চরে বেড়াচ্ছে। আকাশের গায়ে মেঘেদের আনাগোনা সে লক্ষ করছে। একটি খড়বোঝাই নৌকা নদীর ধারে বাঁধা আছে। দুপুরের বাতাসে সাদা ধুলো উড়ছে। শান্ত দুপুরে মানুষের মতো বিশ্বপৃথিবী যেন প্রকৃতি মায়ের নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।
→ শব্দার্থ : গালচেখানি—কার্পেট। রাখাল–মেষপালক। খোল–ভিতর (এখানে নৌকার)। মিহিন—মিহি / পাতলা। আঁচল—কাপড়ের শেষাংশ। ভুবন—পৃথিবী, জগৎ।
কবিতার প্রশ্নোত্তর
ভরদুপুরে - নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী